ভিক্টোরিয়ার নাম বদলে কি এবার তবে ‘ভারতমাতা ভবন’ হয়ে যাবে

ভিক্টোরিয়ার নাম বদলে কি এবার তবে ‘ভারতমাতা ভবন’ হয়ে যাবে

ভারতের সৌধগুলির নাম একে একে বদলে দিলেই তো হয়। যাঁর যেমন ইচ্ছে, তেমন করেই

কলকাতার আইকনিক ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের নাম বদলে ‘ভারতমাতা ভবন’ হয়ে গেল শুনলে আপনার কেমন মনে হবে? বিলেতের রাণি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছিল এই সৌধ। ইংরেজ ভাইসরয় লর্ড কার্জনের উদ্যোগে। এই সৌধকে ভেঙে ফেলার কথা শুনলে কী করবেন আপনি?
সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসকদের অত্যাচারের কথা মনে করে, সেই দেশের রাণির স্মৃতিসৌধ কলকাতার বুকে রাখার তো কোনও মানেই হয় না। ঔপনিবেশিকতার এমন একটি জ্বলন্ত চিহ্নকে চোখের সামনে রাখা যায় না। আর লর্ড কার্জন বাঙালিদের কী কাঠি করেছে, তা তো আমরা জানি।
ভারতমাতার নামেই তাই এই মেমোরিয়াল হলকে উৎসর্গ করাই তো যুক্তিযুক্ত ও দেশভক্তির কাজ হবে। তাই না?
আসলে কয়েকদিন ধরে তাজমহল নিয়ে নতুন করে যে ধ্যাষ্টামো শুরু হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই এমন উদ্ভট প্রস্তাবের উত্থাপন। ব্যাপারটা একই।
তবে এই ধ্যাষ্টামোর জন্য শুধু বিজেপি নয়। এই দোষে দুষ্ট কমবেশি প্রায় সব রাজনৈতিক দলই।
বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম মশাই বিতর্ক তৈরি করতে ভালবাসেন। তিনি বলেছেন, তাজমহল ভারতের ইতিহাসে একটি কলঙ্ক। এতদিন যাঁরা তাজমহলকে প্রেমের প্রতীক হিসেবে জেনে এসেছেন, তাঁরা বিজেপি বিধায়কের এহেন মন্তব্যে বিচলিত হয়েছেন। 
ইতিহাস বলছে শাহজাহান বেশ অত্যাচারী ছিলেন। তাই তাঁর তৈরি করা কোনও সৌধ ‘কলঙ্ক’ হিসেবে গণ্য করা উচিত বলে মনে করেন সঙ্গীত। 
তাজমহলের জায়গায় নাকি শিবমন্দির ছিল! ছবি: উইকিপিডিয়া
একই যুক্তিতে তো কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকেও ‘কলঙ্ক’ হিসেবে ধরা উচিত। ইংরেজ রাণির স্মরণে সৌধ বানাতে নিজেদের ট্যাঁকের কড়ি খরচ করতে হয়েছিল এ দেশের কিছু মানুষকেই। ১৯০৬ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হওয়ার পর প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল সেই সময়।
অন্যদিকে বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার তাজমহল আসলে শিবমন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছিল বলে পুরনো এক তত্ত্ব উস্কে দিয়েছেন। সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছেন, তাজমহলের জমি জোর করে জয়পুরের রাজাদের থেকে নেওয়া হয়েছিল।
আসলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বা অন্য কোনও সৌধের তুলনায় বিজেপির এই উগ্র নেতাদের কাছে তাজমহল সহজ নিশানা। নিজেদের দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডার সঙ্গে তাজমহল খাপ খায়।
আজম খানের মতো সমাজবাদী নেতা তাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বাবরি মসজিদের মতো তাজমহলও আবার ভেঙে ফেলা না হয়। 
অতটা অবশ্য হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখনও। তবে মুঘলসরাই স্টেশনের নাম দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন করা, অযোধ্যায় রামচন্দ্রকে স্মরণ করে দীপাবলি পালন করা, সুবিশাল মূর্তি তৈরি করার মধ্যে দিয়ে বিজেপির রাজনীতির ‘সিম্বলিজম’ স্পষ্ট হচ্ছে।

Comments