হাসতে থাকা রক্তাক্ত পাহাড়ে এত মৃত্যুর দায় কার ?

hot video or dence PRIYANK

মানব গুহ, কলকাতা: পাহাড় হাসছে৷ রাজ্য সরকারের প্রচারে সবসময়ই হাসছে পাহাড়৷ হাসতে হাসতেই এত রক্তপাত, এত মৃত্যু৷ এত মৃতদেহের বোঝা কে বইবে? পাহাড়ে রক্তের হোলি খেলার দায় বিমল গুরুংয়ের পাশাপাশি কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷
জানা গিয়েছে, বছর ২৭ এর পুলিশ অফিসার মধ্যমগ্রামের অমিতাভ মালিক বিয়ে করেছিল মাত্র ৬ মাস আগে৷ প্রেমের সংসার সবে গড়ে উঠছিল৷ আর শুক্রবার, সাদা কাপড়ে ঢাকা স্বামীর মৃতদেহের উপর রূপার কান্না কাঁদিয়েছে গোটা রাজ্যকেই৷ অমিতাভ-রূপার নতুন জীবনের স্বপ্ন ভেঙে খানখান৷ কালাশনিকভের একটা গুলি ফুঁড়ে দিয়েছে টগবগে তরুণের হৃদপিন্ড৷ সেই দার্জিলিং থেকেই ফিরছে অমিতাভের নিথর দেহ৷ দায় কার ? সবটাই কি বিমল গুরুংয়ের?

জুন মাসে বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক ভাবে মেনে না নেওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করে মোর্চা৷ অন্যদিকে, মোর্চার আন্দোলনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি উপেক্ষা করে জেদ করে জুন মাসে চার দিনের পাহাড় সফরে যান রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান৷ সেই শুরু, জেদ আর পাল্টা জেদের বলিতে আজও ভুগছে দার্জিলিং ও রাজ্য৷
মমতার জেদ বজায় রেখেই গত ৮ই জুন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক হয় দার্জিলিং রাজভবনে৷ বৈঠক শুরুর আগে থেকেই ম্যাল লাগোয়া অংশে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছিল মোর্চা৷ মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের দেখানো হয় কালো পতাকা৷ শহরজুড়ে হয় রাজ্য সরকার বিরোধী মিছিল৷ বিমল গুরুং জানিয়েছিলেন, পাহাড়ে বাংলা ভাষাকে ঐচ্ছিকও করা যাবে না৷ আর তা দার্জিলিং এর ক্যাবিনেট বৈঠকেই অনুমোদন করাতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ তা না হলে লাগাতার
আন্দোলন শুরু হবে৷ বোঝাই যাচ্ছিল, বিনা যুদ্ধে মমতাকে একচুল জায়গা ছাড়বে না মোর্চা৷ যদিও গুরুং বাহিনীর এহেন ঘোষণাকে অবশ্য পাত্তাই দেন নি মমতা৷ কেননা, ৪৫ বছর পর দার্জিলিং রাজভবনে বৈঠক হয়েছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার৷ যা নিয়ে সাজ সাজ রব ছিল পাহাড় জুড়ে৷ ৩০ জনেরও বেশি মন্ত্রী ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে৷ কিন্তু সেই বৈঠক চলাকালীন যে দার্জিলিং এ সেনা নামাতে হবে, সেটা ছিল একেবারেই অকল্পনীয়৷
সেই শুরু৷ মন্ত্রিসভার বৈঠককে কেন্দ্র করে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কর্মী-সমর্থকরা৷ মন্ত্রীসভা বৈঠক শেষ হবার পরই বিক্ষোভ রণক্ষেত্রের আকার নেয়৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ৷ মোর্চা সমর্থকদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করা হয়৷ এদিকে পুলিশকে লক্ষ্য করে মোর্চা সমর্থকেরা পাথর ছোড়ে, যার আঘাতে একাধিক পুলিশকর্মী আহত হয়৷ একাধিক পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় মোর্চা সমর্থকেরা৷ বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত দোকান৷ শেষ পর্যন্ত পাহাড়ে নামে সেনা৷ পাহাড়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বনধের ডাক দিয়েছিল মোর্চা৷
সেই শুরু৷ তারপর থেকেই অনির্দিষ্টকালের বনধ দেখেছে পাহাড়৷ চোরাগোপ্তা হামলা ও মৃত্যুর মিছিলও দেখেছে পাহাড় তথা রাজ্য৷ মোর্চা সমর্থকদের রক্তে লাল হয়েছে পাহাড়৷ পাহাড় থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় পাহাড়ের স্বঘোষিত রাজা বিমল গুরুং৷ মমতার হাত ধরেই উঠে আসে বিনয় তামাং৷ বিমল গুরুংয়ের পাল্টা হিসাবে বিনয় তামাং কে ব্যবহার করতে চেয়েছেন মমতা৷ যা অশান্তি আরও বাড়িয়েছে৷
তবু, পরিস্থিতি পাল্টেছিল৷ বিমল গুরুংয়ের ক্ষমতা খর্ব করতে বিনয় তামাংয়ের নেতৃত্বে GTA চালানোর প্রচেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিরোধীদের সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন৷ অভিযোগ ছিল, এই ভাবে মোর্চার মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে কি পাহাড় দখল করতে পারবেন মমতা? বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও অন্যান্য বিজেপি কর্মী সমর্থকদের দার্জিলিং এ বিনয় তামাং বাহিনীর হাতে মারধর খাবার পরিকল্পনাও মমতার তৈরি করে দেওয়া বলে অভিযোগ বিরোধীদের৷
তবু, মোটের উপর শান্ত ছিল পাহাড়৷ ধীরে ধীরে স্বাভাবিকও হচ্ছিল পাহাড়৷ কিন্তু বিমল গুরুং কে আর পাহাড়ে ক্ষমতা দখল করতে দিতে রাজী নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিযোগ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার৷ বিভিন্ন মামলায় তাকে ফাঁসিয়ে গারদ-বন্দী করতেই পাহাড়ে নির্দেশ মমতার৷ আর তাই, যেই বিমল গুরুং ঘোষণা করলেন তিনি দার্জিলিং ফিরছেন, ব্যাস শুরু হয়ে গেল পুলিশের অভিযান৷ মমতা জানতেন, অস্তিত্ব বাঁচাতে গুরুং প্রত্যাঘাত করবেনই৷ ঠিক তাই হল৷ তাতেই প্রাণ হারালেন এক পুলিশ কর্মী সহ আরও কয়েকজন রাজ্যবাসী৷
হাস্যমুখ পাহাড় কাঁদছে কেন? ভয়ংকর সুন্দরী জ্বলছে কেন? উন্নয়নের মোড়কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড় দখলের রাজনীতিই কি দায়ী? না কি পুরভোটের রেজাল্টে ভয় পেয়ে, রাজ্য সরকারের উন্নয়নকে বাধা দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মোর্চার জেদই এর জন্য দায়ী? প্রশ্ন আগেই ছিল৷
পাহাড়ে সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য বিমল গুরুংয়ের বিচার হবে৷ নিজের অনুগামীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবার জন্য গুরুংয়ের বিচার হবে আইন অনুযায়ী৷ রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার দায়ে দোষী সে৷ মানুষের ভোটে নির্বাচিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার দায়ে তার বিচার হবে আদালতে৷  তবু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়৷ লাশের রাজনীতির দায় কার? পুরোটাই কি বিমল গুরুংয়ের? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷
পাহাড়বাসীর পাশাপাশি এবার প্রশ্ন তোলা শুরু করলেন সমতলবাসীরাও৷ সেখানে কিন্তু বিমল গুরুংয়ের পাশাপাশি আঙুল উঠছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেদের রাজনীতির দিকেও৷ গোর্খাল্যান্ড বনাম অখন্ড বাংলার এই রাজনীতিতে যারা বলি হচ্ছেন তাদের দায় কে নেবে? এত মৃত্যুর দায় কার ?


Comments

Post a Comment